Tuesday, May 26, 2015

হাদীস অস্বিকারকারী আহলে কুরআন কাফির কেন? প্রমাণিক আলোচনা



হাদীস অস্বিকারকারী আহলে কুরআন কাফির কেন? প্রমাণিক আলোচনা


প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম!
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব!
আশা করি ভাল আছেন। আল্লাহ তাআলা আপনাদের মেহনতকে কবুল করুন।
মুফতী সাহেব! ইদানিং একটি দলের কর্মকান্ড লক্ষ্য করছি। বিশেষ করে ইন্টারনেটে। যারা হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে। হাদীস সম্পর্কে খুবই বিষোদগার করে থাকে। বলে হাদীস সব নাকি মানুষের বানানো। মুহাম্মদের [সাঃ] এর কথা। এটি মানার কোন প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমেই বিভক্তি ছড়িয়েছে। মানতে হবে শুধুই কুরআন। কুরআন পূর্ণাঙ্গ। তাই এছাড়া আর কোন গ্রন্থেরই প্রয়োজন।
এক কথায় তারা হাদীস মানে না। সম্ভবত তারা নিজেদের নাম আহলে কুরআন বলে থাকে। এ বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত দলীলভিত্তিক সমাধান আশা করছি।
 উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইংরেজ আমলে  আহলে কুরআন নামক দলের আবির্ভাব হয়েছে।  আহলে কুরআন নামের আড়ালে এ গোষ্টিটি হাদীসকে অস্বিকার করে থাকে। আহলে কুরআন নামধারীরা পরিস্কার কাফির। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর হাদীসকে অস্বিকার করবে সে ব্যক্তি কিছুতেই মুসলিম নয়।এতে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মাঝে কারো দ্বিমত নেই।
এসব লোকদের গোমরাহী ধরার জন্য কয়েকটি উসূলী কথা বলে দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এটি ফলো করলে তাদের ভ্রান্তিতা সহজেই ধরতে পারবেন।
প্রথমে হাদীস কাকে বলে তা জেনে নেই।
اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6
রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}
রাসূল সাঃ এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে একাধিক আয়াত এসেছে। যেমন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥٩:٧
রসূল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। { সূরা হাশর-৭}
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূরা আলে ইমরান-৩১}
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ ۚ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ [٦٠:٦
তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে,আল্লাহ বেপরওয়া,প্রশংসার মালিক। {সূরা মুমতাহিনা-৬}
শুধু তাই নয়। রাসূল সাঃ এর আমল কথাকে আল্লাহর কথা বলে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4
তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না, বরং তিনি তা’ই বলেন, যা আল্লাহ তা’আলা অহী মারফত জানাতে বলেন। সুরা নজম-৩-৪}
উপরোক্ত আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় প্রমাণ করছে। রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ, আমল ইত্যাদি যা হাদীস সেটিকে অস্বিকার করা মানে আল্লাহকে অস্বিকার করা। কুরআনকেই অস্বিকার করা। তাই রাসূল সাঃ এর হাদীস অস্বিকারকারী কিছুতেই কুরআন মান্যকারী হতে পারে না। বরং সে এক নাম্বারের কুরআন অস্বিকারকারী।
আরো পরিস্কার ভাষায় কয়েকটি যৌক্তিক অবস্থান বুঝে নিন।
যুক্তি
হাদীসের ক্ষেত্রে বিষয় হল তিনটি। যথা-
জরুরতে হাদীস তথা হাদীসের প্রয়োজন ছিল কি না?
উজুদে হাদীস তথা হাদীস বিদ্যমান ছিল কি না?
হিফাযতে হাদীস তথা হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে কি না?
এই হল হাদীসের হালাত। এখন প্রশ্ন হল এসব নামধারী আহলে কুরআনরা অস্বিকার করে কোনটি?
জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করেন?
উজুদে হাদীসকে অস্বিকার করেন?
হিফাযতে হাদীসকে অস্বিকার করেন?
যদি জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করেন, তাহলে প্রশ্ন হল ঈমান আনার পদ্ধতি কি হবে? নামায কিভাবে পড়বো? হজ্ব কিভাবে করবো? কি কি কারণে রোযা ভঙ্গ হয়? পারিবারিক জীবন কিভাবে চালাবো? এসব কথা কোথায় পাবো? কুরআনেতো নেই। বিবাহ করার পদ্ধতি কি হবে? যাকাত কিভাবে প্রদান করবো? জানাযা নামায পড়ার পদ্ধতি কী হবে?
এসবতো কুরআনে নেই। এসব বিষয়ে সমাধান কী হবে?
সুতরাং এসবের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। অর্থাৎ রাসূল সাঃ এর কথা, কর্ম ও তাকরীর দ্বারা এসবের সমাধান দেখা আবশ্যক।
বুঝা গেল শরীয়ত পূর্ণতা পেতে হলে হাদীস লাগবেই। হাদীস ছাড়া কোন আমলই পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব নয়। তাই জরুরতে হাদীসকে অস্বিকার করার কোন সুযোগই নেই।
দুই নাম্বার বিষয় হল উজুদে হাদীসকে অস্বিকার করা। তথা কেউ যদি বলে যে হাদীস দুনিয়াতে বিদ্যমানই ছিল না। তাহলে এটি হবে গাঁজাখুরী কথা। কারণ হাদীস মানেতো কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিধান পালন করা। আর রাসূল সাঃ নবুওয়ত প্রাপ্তির পরতো সেই বিধানই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আর রাসূল সাঃ যা করেছেন যা বলেছেন তার নামইতো হাদীস।
যদি বলা হয় হাদীস বিদ্যমান ছিল না। তাহলে বলতে হবে রাসূল সাঃ নবী হবার পর থেকে নিয়ে আল্লাহর কোন নির্দেশই পালন করেননি। আমল করেননি। যদি বলা হয় আমল করেছেন, তাহলেতো এ সবই হাদীস বিদ্যমান হওয়ার প্রমাণবাহী। আর যদি বলা হয় আমল করেননি, তাহলেই কেবল বলা যায় হাদীস বিদ্যমান ছিল না।
কিন্তু একথা কি কোন মুসলমান দাবি করতে পারে যে, রাসূল সাঃ আল্লাহর কোন নির্দেশই ২৩ বছরের নবুওতী জিন্দিগীতে আমল করেননি? নিশ্চয় বলতে পারবে না। যদি বলতে না পারেন, তাহলেতো পরিস্কার বুঝা গেল যে, রাসূল সাঃ এর হাদীস বিদ্যমান ছিল। তা অস্বিকার করা মানে রাসূল সাঃ এর আমলী জিন্দেগীকে অস্বিকার করা।
তাই উজুদে হাদীস অস্বিকার করারও কোন সুযোগ বাকি রইল না।
হিফাযতে হাদীস তথা হাদীসগুলো সংরক্ষিত আছে কি না?
হিফাযতে হাদীসকেও অস্বিকার করার কোন সুযোগ নেই। দেখুন কিভাবে মুহাদ্দিসীনরা প্রতিটি হাদীসের সূত্রকে একত্র করেছেন। কিভাবে প্রতিটি রাবীদের জীবনী নিয়ে জরাহ ও তাদীল করেছেন। কিভাবে প্রতিটি বর্ণনাকারীদের জীবনী অবস্থান, সমসায়িকদের মন্তব্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। যা পরিস্কারভাবে হাদীস সংরক্ষিত হবার প্রমাণ বহন করে।
সেই সাথে যদি হাদীস সংক্ষিতই না থাকে, তাহলে ইসলামই সংরক্ষিত নয় বলে দাবি করতে হবে। কারণ হাদীসেই কুরআনের বিধানের আমলী হালাত বিধৃত হয়েছে। এখন যদি সেসব হাদীসই সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে ইসলামী শরীয়তের আমলী অবস্থাও আর সংরক্ষিত নয় বলে প্রতীয়মান হয়ে যায়।
যা কোন মুসলমানই দাবি করতে পারে না।
সুতরাং একথা পরিস্কার যে, হাদীস সংরক্ষণকে অস্বিকার করারও কোন সুযোগই নেই।
আশা করি উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেছে হাদীস করা মুর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। সেই সাথে হাদীস অস্বিকার করা মানেই পুরো দ্বীনকেই অস্বিকার করা।
হাদীস অস্বিকার মানেই কুরআন অস্বিকার করা। হাদীস অস্বিকার করা মানেই রাসূল সাঃ এর আমল অস্বিকার করা। হাদীস অস্বিকার করা মানেই ইসলামী শরীয়ত অস্বিকার করা।
এ কারণেই হাদীস অস্বিকারকারী যতই সুন্দর নামে আসুক না কেন, তারা অবশ্যই কাফির।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

হাদীস অস্বীকার করা কুরআন অস্বীকার করারই নামান্তর (আহলে কুরআনের স্বরূপ উন্মোচন)


Monday, May 25, 2015

'আহলে কুরআন' একটি ভ্রাণ্ত ফির্কা

'আহলে কুরআন' একটি ভ্রাণ্ত ফির্কা


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য । এবং আমাদের মধ্যে প্রেরণ করেছেন বহু নাবী -রাসূলগণ (আ.)। যারা আমাদেরকে ডেকেছেন সত্যের পথে, দেখিয়েছেন জান্নাতের পথ যেমনিভাবে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন । তাই তাদের প্রতি আমাদের দূরুদ ও সালামসহ আল্লাহর পক্ষ হতে যথাযোগ্য মর্যাদা পাওয়ার প্রার্থনা করি । আমীন । 

এবার আসা যাক আলোচ্য বিষয়ে । যা আমাদের স্বল্পজ্ঞানী ও জ্ঞানহীন মুসলিমদের জন্য বড় হুমকি । যারা স্বল্প পরিসরে হলেও দুর্বল প্রকৃতির মানুষগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অনেকর মধ্যেই সৃষ্টি করছে নানা প্রশ্ন! যা একজন মানুষের ঈমান হননের জন্য যথেষ্ট! আর সেই দলটির নাম হলো 'আহলে কুরআন' । 

প্রায় ১১ মাস হলো সেই দলটির কিছু কর্মীর সাথে পরিচয় । যদিও সরাসরি না তবে অনলাইনে বহু তর্ক হয়েছে । তাদের দাবি হলো- (১) একজন মানুষের জন্য পবিত্র কুরআন যথেষ্ট, (২) হাদীস মানার প্রয়োজন নেই (৩) রাসূলের সুন্নাত বলে কিছু নেই! সবই আল্লাহর সুন্নাত । ........ অর্থাৎ তারা মুখে রাসূল (সা.) কে বিশ্বাস করলেও কর্মের (ইবাদাতের) ক্ষেত্রে করেছে বর্জন । এই আচরণ ই তাদেরকে মুসলিম থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট । 

আর এই ফির্কাটি সম্পর্কে বহু আলেম একমত যে তারা ইয়াহুদী/ খ্রীষ্টানদের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রাণ্তি ছড়াচ্ছে । অর্থাৎ তাদের কার্যকলাপের সাথে মুসলিমের কোনো সম্পর্ক নেই! এবং তাদের দ্বারা ইসলামের কোনো উপকার হবে না! বরং তারা ইসলামকে বিকৃত করতে চাচ্ছে (!) যার বিরুদ্ধে সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া জরুরী প্রয়োজন! 

আর এখন যদি কারোর মনে প্রশ্ন জাগে 'কেন আমরা তাদের বিরোধীতা করবো? / কিভাবে তাদের মূলহীন যুক্তির বিপক্ষে ইসলামকে দাঁড় করাবো ?' তাদের জন্য নিচের কিছু বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন! 

মহান আল্লাহ বলেন, 
"বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে (মুহাম্মদ (সা.) কে ) অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।"- (সূরা আল ইমরান-৩১) 

অর্থাৎ কোনো মানুষ যে আল্লাহকে ভালোবাসে তা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই রাসূল (সা.) কে ভালোবাসতে হবে । তাঁকে অনুসরণ করতে হবে । অন্যথায় কেউ ই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না! আর রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করা মানে উনার সকল আদেশ নিষেধ মেনে নেওয়া । আর রাসূল (সা.) বলেন, "তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয়তর হই।" -(সহীহ বুখারী-১৪) 

মহান আল্লাহ আরো বলেন, 
"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।" -(সূরা মহাম্মদ: ৩৩) 

অর্থাৎ আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য না করি (!) তাহলে আমাদের কোনো আমল ই কাজে আসবে না! আর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করা মানে তার দেওয়া নিয়ম-নীতি (হাদীস) মেনে নেওয়া । আর যে তা অস্বীকার করবে(!) অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর হাদীসকে প্রত্যাখান করবে(!) সে মূলত আল্লাহর দেওয়া আদেশকেই প্রত্যাখান করলো(!) যা স্পষ্ট কুফরি! 

ইমাম ইবনে হাজম (রহ.) তাঁর আল আহ্কাম গ্রন্থে লিখেছেন, 'কোনো বব্যক্তি যদি বলে যে, আমরা শুধু তাই গ্রহণ করবো যা কুরআনে পাওয়া যায়, তা ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করবো না, তাহলে সে গোটা মুসলিম উম্মাতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাফির' 

আর হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, "খুব দ্রুত এমন সব লোকজন আসবে যারা কুরআনের প্রতি সন্দেহ নিয়ে তোমাদের সাথে বিবাদ করবে, তোমরা তাদেরকে সুন্নাত বা হাদীসের সাহায্যে গ্রেফতার করো । কারণ সুন্নাতের ধারক বা হাদীস বিশারদ মহান আল্লার কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী ।" -(বুখারী, সূচনা অধ্যায়) 

অর্থাৎ হাদীস/ রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই । আর তা অস্বীকার করা স্পষ্ট কুফরি! তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যে, কোন ব্যক্তি যেন আমাদের অজ্ঞতা কিংবা স্বল্প জ্ঞানের সুযোগ নিয়ে আমাদের ঈমান কেরে নিতে না পারে । 

আমাদের সতর্কতার উদ্দেশ্যে- মহান আল্লাহ আরো বলেন, 
" তোমাদের সংগী (রাসূল (সা.)) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।" -(সূরা আন নাজম: ২-৩) "রাসূল (স.) তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ করো, আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তাথেকে বিরত থাকো" -(সূরা আল হাশর: ৭) 

অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর প্রতিটা কর্ম পদ্ধতি, প্রতিটা আচরণ এবং প্রতিটা নসীহার মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য হেদায় । তাহলে কি করে আমরা রাসূল (সা.) এর সুন্নাহকে ব্যতীত সফলতার মুখ দেখতে পারি? -অসম্ভব! 

পরিশেষে বলতে পারি, পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে, যেখানে মহান আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করার আদেশ করেছেন! শুধু কি তাই? -তিনি আরো বলেছেন রাসূল (সা.) এর পদ্ধতি ব্যতীত আমাদের কোনো আমলই কাজে আসবে না! এমনকি তাও স্পষ্ট করেছেন যে রাসূল (সা.) এর প্রতি পূর্ণ আস্হা ব্যতীত কেউ জান্নাতেও যেতে পারবে না! 

আল্লাহ আমাদেরকে এইসব ভ্রাণ্ত মতবাদ (আহলে কুর'আন) থেকে রক্ষা করুক । আমীন । 

''যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহ'র মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।'' -(সূরা আহযাব, আয়াত: ২১)

"তোমরা যদি তাঁর (রাসূল (সা.) এর) আনুগত্য (সুন্নাহ অনুসরণ) কর, তবে সৎ পথ পাবে।" -(সূরা আন নূর: ৫৪)


ইফতারের সঠিক সময়ঃ সূর্যাস্তের সাথে সাথে নাকি রাত হবার পর?

ইফতারের সঠিক সময়ঃ সূর্যাস্তের সাথে সাথে নাকি রাত হবার পর?

লিখেছেন মুহাম্মদ হাসান

এক আহলে কুরানি আমাকে বলল যে আমাদের নাকি রোযা হয়না কারন আমরা নাকি রাত হওয়ার আগেই ইফতার করি! আমি জিজ্ঞাস করলাম কি বলছেন ভাই? তিনি বললেন হ্যাঁ, কারন আল্লাহ কুরানে বলেছেন “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (সুরা বাকারা ২:১৮৭) । সুতরাং আমাদের করোর রোযা হয় না । উনি হাদিস মানে না । উনাকে বুঝাতে হলে কুরান থেকেই বুঝাতে হবে, যদিও অতিতে অনেকবার কুরান থেকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম- উনি কোন উত্তর দেননি এবং বুঝারও চেষ্টা করেননি । তারপরও চেষ্টা করছি- আমাদের কাজ চেষ্টা করা হেদায়াতের মালিক আল্লাহ । আসুন কুরান থেকেই দেখি “রাত” কখন শুরু হয়, ইনশা আল্লাহ ।  কুরানের এই আয়াতের ব্যাখ্যা কুরানের মধ্যেই দেওয়া আছে যার দারা প্রমানিত হয় যে “রাত” শুরু হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে । শুরুতেই আমরা দেখে নেই “রাত” বা night দারা কি বুঝি । অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী night মানে হলঃ “The period from sunset to sunrise in each twenty-four hours”  অর্থাৎ রাত শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে । আর রাত দারা একটা নির্দিষ্ট  সময় কাল বুঝানো হয়- রাত মানেই অন্ধকারময়তা বুঝায় না । যেমন সূর্য গ্রহনের সময় দিনের বেলাও যদি অন্ধকার হয় সেটাকে আমরা রাত বলিনা । অন্ধকারময়তা হল আলোর অনুপস্থিতি যা রাতের অংশ ।  এখন আসুন দেখি রাতের শুরুর ব্যাপারে কুরআন কি বলে ।
প্রমান ১। “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন” সূরা যোমর 39:৫
এই আয়াতে  يُكَوِّرُ শব্দের অর্থ হল কোন কিছুকে মোড়া বা আচ্ছাদিত করা বা কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। এর দারা এটাও প্রমানিত হয় যে পৃথিবী গোলাকার তানাহলে রাত ও দিনের আকস্মিক পরিবর্তন হত । মোড়ান, আচ্ছাদন বা প্যাঁচানো একটি slow process অর্থাৎ এটি আস্তে আস্তে ঘটে । সুতরাং এই আয়াত হতে এটা পরিস্কার যে এই আচ্ছাদনের কাজটি সূর্যাস্তের মাধ্যমে শুরু হয় যেহেতু সূর্যাস্তের ফলে আস্তে আস্তে অন্ধকার হওয়া শুরু হয় আর ঠিক তখনই রাতের শুরু হয় । যদি রাতের শুরু বলতে একদম অন্ধকারকে বুঝানো হয় (যেটা সূর্য ডুবার প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিলক্ষিত হয়) তাহলে এই আয়াতের রাত্রিকে দিবস দারা আচ্ছাদিত করার অর্থ কি? কারন তখন আর এটা আচ্ছাদন হবেনা- এটা হবে আকস্মিক পরিবর্তন কিন্তু আমরা বাস্তবে আচ্ছাদনই দেখতে পাই । নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও আমরা এই ধারনা পাই ।
“এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন” (সূরা হাজ্জ্ব২২ আয়াত ৬১)

প্রমান ২। ﴿وَأَقِمِ الصَّلَوةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفاً مِّنَ الَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَـتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَـتِ ذلِكَ ذِكْرَى لِلذَكِرِينَ – وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ ﴾
“আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক” (সুরা হুদ ১১ আয়াত ১১৪)
 এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ طَرَفَىِ যার অর্থ দুই প্রান্ত – এর দারা নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট বুঝানো হয় । সুতরাং এখানে দিনের দুটি প্রান্ত বলতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকেই বুঝানো হচ্ছে যেহেতু এই দুটি প্রান্তই হল দিনের নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট । এর পরক্ষনেই বলা হয়েছে “রাতের প্রান্তভাগে” অর্থাৎ সূর্যাস্তের সংগে সংগে রাতের শুরু হয় যা এই আয়াত দারা স্পষ্টতই প্রতিয়মান ।
প্রমান ৩।
وَالشَّمْسِ وَضُحَـهَا- وَالْقَمَرِ إِذَا تَلـهَا- وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّـهَا- وَالَّيْلِ إِذَا يَغْشَـهَ
“১-শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, ২-শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,৩- শপথ দিবসের যখন তা (সূর্যকে) প্রকাশ করে, ৪-শপথ রাত্রির যখন তা সূর্যকে ঢেকে দেয়” (সূরা আশ-শামস ৯১ আয়াত ১-৪)
৩ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ দিবস= সূর্যের প্রকাশ
৪ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ রাত্রি= সূর্যের প্রস্থান অর্থাৎ রাতের শুরু হচ্ছে সূর্যাস্তের সাথে সাথে । সুতরাং  “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (সুরা বাকারা ২:১৮৭) এর অর্থ দাড়ায় সূর্যাস্তের সাথে রোযা পূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাই ইফতারের সঠিক সময় । আর এটাই রাসুলের(সঃ) শিক্ষা ।
আল্লাহ আমাদেরকে ইফতারের সময় বের করার জন্য এত গবেষণামুলক কঠিন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেননি । এটা শুধু এই পথভ্রষ্ট একদল “আহলে কুরান” যুবকদের জন্য আমার সামান্য প্রচেষ্টা । আমি কুরআন থেকেই রাসুলের সুন্নাতকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি । আল্লাহ আমাদের জন্য তার রাসু(সঃ) কে অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছেন । আসলে এদেরকে “আহলে কুরান” বলাও ঠিকনা যেহেতু “আহলে কুরান” মানে হল যারা কুরআনকে অনুসরণ করে কিন্তু এরা কুরআনকে প্রকৃত পক্ষে অনুসরণ করেনা । এরা নিজেরদের মনস্কামনা চরিতার্থ করার জন্য সুবিধামত কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে মানে । এরা কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশকে মানে না । এদের কথাই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন এভাবে “ তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন” (সূরা আল বাক্বারাহ ২ আয়াত ৮৫)  আল্লাহ আমাদেরকে তার দ্বীনকে সথিকভাবে বুঝার এবং মানার তাওফিক দান করুক । আমিন ।  
আমার আহলে কুরানিদের কাছে একটা প্রশ্নঃ উত্তর নরওয়েতে মে থেকে জুলাই  মাস পর্যন্ত সূর্য ডুবে না সেজন্য রাত হয় না । এখানকার মুছলমানেরা নামাজ রোযা কিভাবে করবে? 
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  সময় স্বল্পতার কারনে লেখাটি তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে । ভুলত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিলে খুশি হব । 




রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
: "إذا أقبل الليل من ههنا وأدبر النهار من ههنا وغربت الشمس فقد أفطر الصائم" [أخرجه البخاري رقم 1954 ومسلم رقم 1100].
যখন রাত এ দিক হতে আসে, দিন এ দিক হতে যায় আর সূর্য অস্ত যায় তখন রোজাদারের ইফতার হয়ে যায়। [ বোখারি ১৯৫৪ ও মুসলিম ১১০০]




রোজাদারের ইফতার করার আনন্দ


রোজাদার ব্যক্তি সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পরই যেসব খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে রোজা ভঙ্গ করেন, তা-ই ইফতার; এর অর্থ রোজা ভঙ্গ করা। আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে এটি উদ্ভূত, যার মানে নাশতা করা, হালকা খাদ্য গ্রহণ করা। ইফতার শব্দের অন্য অর্থ বিরতি, ভঙ্গ করা বা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। রোজা পালনে ইফতারের ফজিলত অপরিসীম এবং সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ।
সারা দিন রোজা পালন করে যথাযথভাবে সময়মতো ইফতার করার গুরুত্ব অত্যধিক। সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা উত্তম। অন্ধকার হওয়ার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয়। বিলম্বে ইফতার করা মাকরুহ। সেহির বিলম্বে খাওয়ায় সওয়াব আর ইফতার বিলম্বে না করায় সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নাও, এতটুকু বিলম্ব কোরো না।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মানুষ তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যত দিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দোয়ার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ইফতারের সময় এ দোয়া পড়তে হয়, ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রোজা পালন করলাম, আর তোমার প্রদত্ত রিজিক দিয়েই ইফতার করছি।’ ইফতারের সময়টি যেমন সুনির্দিষ্ট করা, তেমনি এ সময়ে আল্লাহর কাছে রোজাদার ব্যক্তির দোয়াও কবুল করার পরম মুহূর্ত। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। তাই প্রত্যেকের উচিত ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)
যে পর্যন্ত সূর্যাস্ত সম্বন্ধে কিছুমাত্র সন্দেহ থাকে, সে পর্যন্ত ইফতার করা জায়েজ নয়। সূর্যাস্তের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ইফতার করতে হবে। ঘড়ির হিসাবে সময় হলেও একটু বিলম্ব করে ইফতার করা উত্তম। যখন নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে সূর্য অস্ত গেছে, তখন আর দেরি না করে শিগগির ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে ‘মহান প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দ্রুত ইফতার করে, তারাই আমার কাছে অধিকতর প্রিয়।’ এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি, যে ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নেয়।’ (তিরমিজি)
ইফতারের সময় হালাল দ্রব্য দিয়ে ইফতার করা মহাপুণ্যের কাজ। খোরমা, খেজুর, কিশমিশ অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা ভালো। খুরমার অভাবে অন্য কোনো মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন শরবত বা দুধ দিয়ে অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর, অর্থাৎ খোরমা দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। রোজাদার সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর যখন ইফতার করেন, তখন সারা দিনের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি, শ্রান্তি ভুলে গিয়ে অনাবিল আনন্দে বিভোর হন। রোজা পালনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা পুরস্কারস্বরূপ ইফতারের ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। এর একটি হলো তার ইফতারের সময় আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম) কোনো রোজাদারকে ইফতার করানোয় অশেষ সওয়াব ও নেকি অর্জন করা যায়। অশেষ নিয়ামত এবং বরকত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার জন্য গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমান সওয়াবের অংশীদার হবে।
রমজান মাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ইফতার। রোজাদার ধনী-গরিবনির্বিশেষে তার পরিবারের ছোট-বড় সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী রকমারি ইফতারসামগ্রী সামনে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের অর্থাৎ সূর্যাস্তের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এহেন কঠিন প্রতীক্ষার মধ্যে প্রকৃত রোজাদারের খোদাভীতির পরম শান্তিময় নিদর্শন প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ইফতার মুহূর্তে ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘দেখো! আমার বান্দাকুলের ধর্মভীরুতার কী অপূর্ব রূপ।’ এর ভেতরে রয়েছে আল্লাহভীতি, ন্যায়নিষ্ঠা, সংযম এবং প্রবৃত্তি দমনের চরম নিদর্শন।
সূর্যাস্তের পর ইফতারের সময় রোজাদার নিজের সঙ্গে পথিক, মুসাফির, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়নির্বিশেষে অসহায় হতদরিদ্রকে সর্বান্তঃকরণে ও সবিনয়ে ইফতারিতে শরিক হতে আহ্বান করে থাকেন। এতে ইসলামের পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্বুদ্ধ হন এবং নিজেদের ইফতারি পরস্পর ভাগাভাগি করে খাওয়ার মধ্যে চরম তৃপ্তি, অশেষ পুণ্য ও কল্যাণ লাভ করেন। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মশুদ্ধি, সংবেদনশীলতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, ধনী-গরিবের মধ্যকার ভালোবাসার উপলব্ধি ঘটে এবং ইফতার অনুষ্ঠানে এটি আরও বেশি উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তাই সূর্যাস্ত সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পর রোজাদারদের দ্রুত ইফতার করার মাধ্যমে সওয়াব ও আনন্দ লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ ও দাওয়াহ বিভাগ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।